শিল্পঃ খায়, না মাথায় দেয়?

শিল্প: খায়, না মাথায় দেয়?

শ্রিয়ংকর আচার্য


কলেজে পড়ার সময়, ১৯৮০ সাল নাগাদ দুটো বাংলা ছবি মুক্তি পায়৷ একটি 'কাকার কীর্তি' (নাম পরিবর্তিত), অপরটি খাবারের সন্ধানে' (নাম পরিবর্তিত)৷ খাবারের সন্ধানে' কে বলা হল আর্ট ফিল্ম’ আর 'কাকার কীর্তি'কে বলা হল ‘কমার্সিয়াল ফিল্ম’ 'কাকার কীর্তি' রমরম করে চলল৷ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ দেখল, হাসল, কাঁদল, রসাস্বাদনের আনন্দ পেল৷ এক পরিপূর্ণ হৃদয় নিয়ে প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরোলো৷ এক একজন একাধিকবারও দেখল৷ আজ চল্লিশ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে, আজও সমানভাবে আনন্দ দিয়ে চলেছে৷ খাবারের সন্ধানের কি হল? সে সত্যিই কি খাবারের সন্ধান পেল? সে খুব তাড়াতাড়ি হল থেকে বিদায় নিল৷ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ তো দূরের কথা, মুষ্টিমেয় কয়েকজন দেখল৷ তারপর একেবারে চলে গেল কৃষ্ণ গহ্বরে কিন্তু সে যে উচ্চ ঘর, তাই আর্ট ফিল্ম’ বলে শ্রেষ্ঠ জাতীয় পুরস্কার, স্বর্ণকমল বিজয়ী হল৷ পুনঃ সম্প্রচারিত হতে বিশেষ দেখা গেল না৷ 'কাকার কীর্তি' দীর্ঘ সময়কে অতিক্রম করে আজও একইভাবে আনন্দদায়ক৷

 

তাহলে আনন্দদান কি শিল্পের পরিপন্থী? আনন্দদায়ক হলে কি শিল্পগুণে ঘাটতি দেখা দেয়? কোন্ সংজ্ঞার নিরীখে শিল্পের বিচার করেন শিল্পবোদ্ধারা? যতক্ষণ পর্যন্ত না একটা সম্পূর্ণ একীভূত তত্ত্ব (complete and unified theory) বা সংজ্ঞা পাওয়া যাচ্ছে ততক্ষণ প্রশ্নের মীমাংসা হচ্ছে নাফিল্মে আর্ট আছে বলে আর্ট ফিল্ম’, নাকি আর্ট নেই বলে আর্ট ফিল্ম’? আর্টের একটা পাকাপোক্ত সংজ্ঞা চাই৷ বোদ্ধাদের জিজ্ঞেস করে সদুত্তর পাওয়া গেল না৷ তাঁরা সংজ্ঞা না দিয়ে নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা দিলেন, যার মধ্যে দশ রকমের ইউরোপীয় তত্ত্ব, সবই অসম্পূর্ণ, অন্ধের হস্তী দর্শনকেউ কানটাকে, কেউ শুঁড়টাকে, কেউ থামের মত পা’টাকে হাতী বলছে, গোটা হাতীটাকে কেউ দেখে নি। এর একরকম উদ্ধৃতি, তার আর একরকম উদ্ধৃতি, সব মিলে জগাখিচুড়ি বিষয়টাতে সংশয় আরও বেড়ে গেল৷ বোদ্ধারা সংশয় বাড়ানোর ব্যাপারে বোধ হয় বেশি উৎসাহী৷ আমাকে সংশয়াকুল দেখে তাঁরা মিটি মিটি সাফল্যের হাসি হাসলেন – ‘কি, কেমন গুলিয়ে দিলাম’?

 

প্রশ্নের সদুত্তর মিলল ভরতের নাট্যশাস্ত্রে৷ শিল্প সম্পর্কিত একটি সম্পূর্ণ(complete) একীভূত তত্ত্ব(unified theory) রয়েছে এখানেই৷ তত্ত্ব যখন সম্পূর্ণ ও একীভূত হয় তখন সংজ্ঞা সহজেই এক কথায় বলে দেওয়া যায়৷ দশরকম বলতে হয় না। সেই সংজ্ঞায় বলা যায়শিল্প বা শিল্পমাধ্যম হল ভাবকে রসে রূপান্তরিত করার উপায়৷ ভাব কি? নাট্যশাস্ত্রে আটটি স্থায়িভাবের কথা বলা হয়েছে৷ এই ভাব সবার অন্তঃকরণে কমবেশি উৎপন্ন হয় তার চিন্তা থেকে, কর্ম থেকে, স্মৃতি রোমন্থন থেকে, পারিপার্শ্বিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া থেকে৷ কিন্তু তাকে রসে রূপান্তরিত করতে বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন৷ এই বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন মানুষই শিল্পী৷ ভাব যদি কাঁচামাল হয় তাহলে রস হল রন্ধনলব্ধ সুস্বাদু ব্যঞ্জন৷ ব্যঞ্জন কতটা সুস্বাদু হবে সেটা নির্ভর করে রান্নার প্রক্রিয়া তথা রাঁধুনীর দক্ষতার উপর৷ সেরকম শিল্প কতটা রসোত্তীর্ণ হবে সেটা নির্ভর করছে শিল্পীর রসসৃষ্টির ক্ষমতা অর্থাৎ উপস্থাপনার মুন্সিয়ানার উপর৷ মনে রাখতে হবে বিষয়বস্তু নয়, উপস্থাপনাই রস সৃষ্টির মুখ্য শর্ত। শিল্পে যারা কেবল বিষয়বস্তু খোঁজে সেইসব বিষয়বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের জন্য শিল্প নয়। রস সৃষ্টি হলে সেই রসাস্বাদন থেকে এক অপার্থিব আনন্দ পাওয়া যায়৷ এই আনন্দ শিল্প ছাড়া আর কোনভাবে আসতে পারে না৷ বর্তমান neuro-aesthetics এর গবেষণাও সেটা সমর্থন করে৷

 

শিল্পের রসাস্বাদন যখন চলে তখন মস্তিষ্কের বিশেষ কিছু জায়গা উদ্দীপ্ত হয় বা সাড়া দেয়। শিল্পের রসাস্বাদনের আনন্দ, আর কোন কাজে সফলতার আনন্দ (পরীক্ষায় একশো শতাংশ নম্বর পাওয়া, বড়সড় চাকরি পাওয়া ইত্যাদি) বা ইন্দ্রিয়সুখ এক জাতীয় নয় বলে মস্তিষ্কে তাদের উদ্দীপনার কেন্দ্রগুলো আলাদা হয়। এদের মধ্যে একটি নিশ্চেষ্ট (effortless) অবস্থা, অপরটি প্রচেষ্টাযুক্ত (task oriented) অবস্থা। রসাস্বাদন একটি নিশ্চেষ্ট অবস্থা। এই অবস্থায় মস্তিষ্কের যে network উদ্দীপ্ত হয় তাকে বলে default mode network (DMN). সম্প্রতি যে ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে, তাতে কিছু মানুষকে নেওয়া হচ্ছে যাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা মোটামুটি একরকম। তারপর তাদের কোন শিল্পকর্ম দেখানো হচ্ছে যে শিল্পকর্ম তাদের কাছে নতুন নয়, যার সান্নিধ্যে তারা অভ্যস্তশিল্পকর্ম যতক্ষণ দেখানো হবে ততক্ষণ তাদের brain mapping হবে। EEG, MEG, FMRI ইত্যাদি পদ্ধতি প্রয়োগ করে যে ছবি পাওয়া যাবে তাতে মস্তিষ্কের কোন্‌ কোন্‌ জায়গাগুলো কতটা উদ্দীপ্ত হয়েছে সেটা দেখতে হবে, সময়ের সাপেক্ষে উদ্দীপনার মাত্রা কিভাবে পরিবির্তিত হয়েছে, সেটাও দেখতে হবে। মজার ব্যাপার হল, আমরা যখন externally task oriented থাকি (পরীক্ষার খাতা দেখা, প্রশ্ন তৈরি করা, পরীক্ষা দেওয়া, অঙ্ক করা ইত্যাদি) তখন DMNএর কেন্দ্রগুলি নিষ্ক্রিয় থাকে। যখনই নিজের মধ্যে ডুব দিই, বহির্জগত ভুলে যাই, উদ্দেশ্যহীন নিশ্চেষ্ট থাকি, অলস-স্বপন-জাল রচনা করি তখনই এই DMN সক্রিয় হয়। আবার শিল্পের রসাস্বাদন চলাকালীনও DMN সক্রিয় হয়। কারণ ঐ সময় রসিক task oriented থাকে না। তাহলে বলা যায় task oriented থাকলে রসাস্বাদন হবে না, আর তার প্রমাণ হল সেইসময় DMNএর নিষ্ক্রিয়তা। এখানেই রসিক-অরসিকে পার্থক্য। অরসিক task oriented অবস্থায় শিল্পের ব্যাকরণ, প্রযুক্তিগত দক্ষতা, বিষয়বস্তু ইত্যাদি বহিরঙ্গের সবই দেখে, বিশ্লেষণ করে, পত্র-পত্রিকায় লেখে, পুরস্কারও দেয়, কেবল রসাস্বাদনের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়। শব্দার্থে আটকে থাকে, ব্যঞ্জণার্থে পৌঁছতে পারে না।

 

কে রসিক? —যার অন্তরে রয়েছে “মালিন্যহীন স্বতঃলব্ধ প্রজ্ঞা”৷ মনে রাখতে হবে এটা স্বতঃলব্ধ৷ পুস্তক বা ডিগ্রীলব্ধ নয় আর্ট এপ্রেসিয়েশন কোর্সলব্ধও নয়

 

উপকরণভেদে শিল্প বা শিল্পমাধ্যম বিভিন্ন হয়৷ উপকরণ যখন রঙ ও রেখা তখন চিত্রশিল্প বা painting. উপকরণ যদি হয় সা রে গ ম প... তখন হয় সঙ্গীত, আর উপকরণ যদি হয় শব্দ বা word এবং বাক্যবন্ধ তখন কথাশিল্প বা সাহিত্য৷ এগুলির মিশ্রণে আরও শিল্প হতে পারে৷ ফিল্ম বা নাটক নানা উপকরণের মিশ্রণে সৃষ্ট৷ মাধ্যম বা উপকরণ যাই হোক না কেন শিল্পের কাজ ভাবকে রসে রূপান্তরিত করা৷ শিল্পী তাঁর সুবিধামত উপকরণ বেছে নিয়ে অন্তরের ভাবকে রসে রূপান্তরিত করেন। তাহলে ভাব ও রস কয় প্রকার ও কি কি?

 

নাট্যশাস্ত্র-নির্দিষ্ট স্থায়িভাবগুলি হল: রতি, হাস, শোক, ক্রোধ, ভয়, বিস্ময়, উৎসাহ ও জুগুপ্সা৷ এই স্থায়িভাব চিত্তবৃত্তিবিশেষতাই এর উৎপত্তি-বিনাশ আছে। কিন্তু স্বরূপতঃ বিনাশশীল হলেও কয়েকটি ভাব সংস্কাররূপে অন্তঃকরণে স্থায়ী হয়আর সেজন্যই প্রতীতিকালে এর অনুসন্ধান করা যায়। স্থায়িভাব প্রথমে সংস্কাররূপে অনাস্বাদ্য থাকে। কিন্তু তাকে আস্বাদ্য করতে বা রসে রূপান্তরিত করতে নাট্যশিল্পে আরও কয়েকটি সাহায্যকারী অল্পস্থায়ী ভাবের প্রয়োজন হয়, সেগুলি – বিভাব, অনুভাব ও ব্যভিচারিভাব। অর্থাৎ বিভাব-অনুভাব-ব্যভিচারিভাব সমাশ্রিত হয়ে স্থায়িভাব আস্বাদ্য হয় ও রসনিষ্পত্তি ঘটে। রতি থেকে শৃঙ্গাররস, হাস থেকে হাস্যরস, শোক থেকে করুণ রস, ক্রোধ থেকে রৌদ্ররস, ভয় থেকে ভয়ানক রস, বিস্ময় থেকে অদ্ভুতরস, উৎসাহ থেকে বীররস এবং জুগুপ্সা থেকে বীভৎসরস উৎপন্ন হয়৷ রসবস্তুই শিল্পবস্তু৷ রস বস্তুতঃ এক ও অখণ্ডউপনিষদ এই রসস্বরূপকেই পরম ব্রহ্ম বলেছেন – ‘রসো বৈ সঃ’ প্রতীতি ব্যতীত রসের পৃথক সত্তাই নাইসহৃদয় সামাজিকগণের অর্থাৎ রসিকজনের আস্বাদনই এই অলৌকিক রসের অস্তিত্বের একমাত্র প্রমাণ রসের আস্বাদনই রসস্বরূপএই রসাস্বাদনকালে অপর জ্ঞেয় বস্তুর (বহির্জগতের) অনুভবই হয় নারসাস্বাদনেই রসনিষ্পত্তি

 

রান্নার ক্ষেত্রে ব্যঞ্জণ সুস্বাদু কিনা বিচার করে কে? যার রসনায় স্বাদকোরক আছে কেবল সে-ই ব্যঞ্জনের স্বাদ নিতে সক্ষম৷ ধরা যাক কারুর রসনায় স্বাদকোরকের অভাব, সে রসাস্বাদনে অক্ষম, তবুও সে যদি স্বাদবিচারের কাজ পায় তাহলে তার ফল কি হবে? প্রকৃত স্বাদ না নিতে পেরে সে তখন বস্তুবিচার করবে৷ দেখবে রান্নায় কি কি উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে, কোন্ কোন্ রন্ধন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, তার উপরে ইতিহাস, ভূগোল, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাজনীতির প্রভাব - এই সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করতে বসবে৷ তার ভিত্তিতেই মূল্যায়ন করবে৷ বিচারটা ভ্রান্ত বা বিপরীত হতে বাধ্য৷

 

এই রান্নার উপমা শিল্পের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যেতে পারে৷ নাট্যশাস্ত্রকার তাই শিল্পের আস্বাদককে দুভাগে ভাগ করেছেন, রসিক ও অরসিক৷ রসিকই রসাস্বাদনে সক্ষম, তার বিচারই সঠিক বিচার৷ অরসিক রস বোঝে না৷ বোঝে বিষয়বস্তু, ব্যাকরণ, পদ্ধতি, বিজ্ঞান আরও অনেককিছু কেবল রসটুকু ছাড়া৷ অরসিক যদি হয় সমালোচক, বিচারক, তাহলে যে কী সর্বনাশ হতে পারে তার নিদর্শন রবীন্দ্রনাথের ব্যঙ্গকৌতুক 'রসিকতার ফলাফল'৷ আরও মজার ব্যাপার অরসিক ও intellectual শব্দদুটিকে রবীন্দ্রনাথ সমার্থক হিসেবে দেখিয়েছেন তাঁর আর একটি ব্যঙ্গকৌতুক 'অরসিকের স্বর্গপ্রাপ্তি'তে৷

 

অরসিক (Intellectual) গোকুলনাথ দত্ত স্বর্গে এসে কোনকিছুরই মানে খুঁজে পাচ্ছে না৷ সেখানকার সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকারী ভরত মুনির সঙ্গে সঙ্গীত বিষয়ে আলোচনা করছে৷ আর সকলে যখন শ্রীমতী রম্ভার গানের রসাস্বাদনে মুগ্ধ, গোকুলনাথ তখন গানের ব্যাকরণ, নিয়ম, প্রযুক্তি নিয়ে চিন্তিত৷ তার কাছে ভাল লাগাটা কোন ব্যাপার নয়, নিয়মটাই ব্যাপার৷

ভরতঠাকুরকে intellectual গোকুলনাথ বলছে, “আচ্ছা, অধিকারীমশায়, শুনেছি গান-বাজনায় আপনি ওস্তাদ, একটি প্রশ্ন আপনার কাছে আছে। গানের সম্বন্ধে যে ক’টি প্রধান অঙ্গ আছে, অর্থাৎ সপ্ত সুর, তিন গ্রাম, একুশ মূর্ছনা— কী বললেন? আপনারা এ-সমস্ত মানেন না? আপনারা কেবল আনন্দটুকু জানেন! তাই তো দেখছি— এবং যত দেখছি তত অবাক হয়ে যাচ্ছি। (কিয়ৎক্ষণ শুনিয়া) ভরতঠাকুর, ঐ-যে ভদ্রমহিলাটি— কী ওঁর নাম— রম্ভা? উপাধি কী বলুন। উপাধি বুঝছেন না? এই যেমন রম্ভা চাটুজ্জে কি রম্ভা ভট্টাচার্য, কিংবা ক্ষত্রিয় যদি হন তো রম্ভা সিংহ—এখানে আপনাদের ও-সব কিছু নেই বুঝি? আচ্ছা, বেশ কথা, তা, শ্রীমতী রম্ভা যে গানটি গাইলেন আপনারা তো তার যথেষ্ট প্রশংসা করলেন; কিন্তু ওর রাগিণীটি আমাকে অনুগ্রহ করে বলে দেবেন? একবার তো দেখছি ধৈবত লাগছে, আবার দেখি কোমল ধৈবতও লাগে, আবার গোড়ার দিকে— ওঃ, বুঝেছি, আপনাদের কেবল ভালোই লাগে, কিন্তু ভালো লাগবার কোনো নিয়ম নেই। আমাদের ঠিক তার উল্টো, ভালো না লাগতে পারে, কিন্তু নিয়মটা থাকবেই৷

যার রসবোধ নেই সে নিয়ম ছাড়া আর কী দেখবে?

সেই অরসিক যদি বিচারক হয়, তাহলে কি হয়? —যে ফিল্মে আর্ট কম পড়িয়াছে তাহাকে আর্ট ফিল্ম বলা হয়৷ দেশে বিদেশে পুরস্কৃতও হয়, কারণ সর্বত্রই অরসিকদের (intellectual) দাপাদাপি৷ সত্যিকারের বিচারের বাণী তখন নীরবে নিভৃতে কাঁদে৷ অরসিকরা আবার যথাযথভাবে কলকাঠি নেড়ে রাতারাতি বিখ্যাত শিল্পীও হয়ে যায়৷ রাজনৈতিক প্রভাব ও মিডিয়া ব্যবহার করে খ্যাতির শীর্ষে আরোহণ করে৷ তবে দুই কড়া বিচারক আছে বলে শেষ রক্ষা হয় না৷ তাদের কাজে রসাস্বাদনের শাশ্বত আনন্দ নেই বলে শেষ পর্যন্ত বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যায়৷ এই দুই কড়া বিচারক হল, জনতা(সর্বস্তরের মানুষ) ও সময়৷ জনতা বা সর্বস্তরের মানুষ বলতে কেবল ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’র দর্শকের স্তরের কথা বলছি না, বলছি সেই স্তর ও তার উপরের স্তরের কথাও। রসবোধ কোন স্তর মানে না। রস সর্বাত্মক। সময় আর জনতাই ঠিক করে রসের বিচারে কার স্থান কোথায়৷ তবে বিচারক মণ্ডলীতে যদি রসিকজন থাকেন তবে রসোত্তীর্ণ শিল্পকর্মও কখনো কখনো পুরস্কৃত হয় যেগুলি পুরস্কার লাভের পাশাপাশি জনচিত্তজয়ী ও কালজয়ী হয়। এমন ব্যতিক্রমী উদাহরণও আছে।